ফরিদপুরে অবসরপ্রাপ্ত কাস্টমস কর্মকর্তা ও স্বামী পরিত্যক্তা এনজিও কর্মীর পাল্টা পাল্টি
সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল,(২৩ আগস্ট) শনিবার
ফরিদপুর শহরের কাঠপট্টিতে স্থানীয় একটি সংবাদপত্র কার্যালয়ে স্বামী পরিত্যক্তা রেবেকা সুলতানা কনা (৪৬)নামে এক নারীকে আপত্তিকর ছবি পাঠিয়ে পুলিশ দিয়ে হয়রানির অভিযোগে মধুখালী উপজেলার গোন্দারদিয়া গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত কাস্টমস কর্মকর্তা মুন্সি আক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরই পাল্টা অভিযোগে আজ,(২৪ আগস্ট) রবিবার সকালে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের মরহুম অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন মোল্লা মিলনায়তনে
অবসরপ্রাপ্ত কাস্টমস কর্মকর্তা মুন্সি আক্তার হোসেন তার বিরুদ্ধে
বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে, রেবেকা সুলতানা কনা, তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা ছাড়াও, আক্তার হোসেন অর্জিত বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্যাদিও তুলে ধরে।
তিনি অভিযোগ করেন, তার সঙ্গে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল কাস্টমস কর্মকর্তার। বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় বাধে বিপত্তি। এরপর থেকেই শুরু হয়েছে নানাভাবে হয়রানি। ভুক্তভোগী নারী লিখিত অভিযোগে জানান, মুন্সি আক্তার হোসেন তার দূর সম্পর্কের চাচা হওয়ার সুবাদে ছোটবেলা থেকে পারিবারিকভাবে পরিচয় ও সম্পর্ক।তিনি জানান, বাবার বাড়ী মধুখালী উপজেলায় গোন্দারদিয়া একই গ্রামে। বেশ কয়েক বছর আগে তার স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তারপর তিনি মধুখালীতে বাবার বাড়ি চলে আসেন এবং স্থানীয় একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান ম্যানেজার পদে চাকরি নেন। একটি ছেলেও রয়েছে তার। তবে বর্তমানে তিনি অন্যত্র থেকে পড়াশোনা করছে। তিনি আরও জানান, বাড়ীতে আমি আর আমার মা ছাড়া আর কেউ থাকে না। ভাইয়েরাও বাইরে থাকে। দূর সম্পর্কের আত্মীয়তার সুবাদে এই সুযোগ নিয়ে আক্তার হোসেন আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ নেয়। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমাকে বিয়ে করবেন, একটি বাড়ীও লিখে দিবেন-বলে প্রলোভন দেখিয়ে সম্পর্ক করেছেন। কিন্তু যখন বুঝতে পারি যে, তিনি একজন খারাপ আর দুশ্চরিত্রের লোক, তখন থেকেই আর তাকে কোনো সুযোগ দেইনি৷ কিন্তু তারপর থেকে উনি আমার একটার পর একটা ক্ষতি করার চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছেন। অনেক টাকা পয়সার মালিক হওয়ার অন্যরাও তাকে কিছু বলার সাহস পায় না। ওই নারী আরও জানান, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আক্তার হোসেন ঘনিষ্ঠভাবে সময় কাটানোর কিছু ছবি মোবাইলে তুলে রেখেছিলেন তার অজ্ঞাতে। সেই নগ্ন ও অর্ধনগ্ন ছবি এবং ভিডিও তার মোবাইলে পাঠিয়েছে আক্তার হোসেন। তিনি অভিযোগ করেন, প্রথমে তার মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করেন। তাতে কাজ না হওয়ায় তার কর্মস্থলে অফিসের লোকদের কাছে এসব ছবি পাঠিয়ে একজন খারাপ নারী হিসেবে তুলে ধরা হয়। তিনি বলেন, এনজিও অফিসটি ছিল আক্তার হোসেনের বিল্ডিংয়ের ভাড়াটিয়া। ফলে তিনি সহজেই ওই অফিসে প্রভাব খাটিয়ে তার চাকরিটি শেষ করে দিতে সমর্থ হন। এরপর গত মার্চ মাস থেকে তিনি মধুখালীর পোদ্দার মার্কেটে দোকান ভাড়া নিয়ে লেডিস আইটেমের জামাকাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। গত বুধবার মধুখালী থানার একজন এসআই সেখানেও দুই দফায় তার সম্বন্ধে খোঁজ-খবর নিতে যায়। বুধবার তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে দুইবার পুলিশ পাঠিয়ে তাকে হয়রানি করা হয় বলে তিনি জানান। ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, চার বছর আগে মুন্সি আক্তার ওই মোবাইল ফোনটি তাকে কিনে দেন। তবে টাকাটি তিনিই দেন। তার নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম দিয়ে তখন থেকেই তিনি ফোনটি ব্যবহার করছেন। তার অভিযোগ, এখন যেহেতু এই নম্বরে আক্তার মুন্সি আপত্তিকর ছবিগুলো পাঠিয়েছে এবং এই তথ্য জানাজানি হয়ে যায়। সেজন্য প্রমাণ মুছে ফেলতে এই ফোনটি ফিরিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। আর তার কথা মতো অন্যরাও তার নামে বদনাম ছড়াচ্ছে। ওই মার্কেট কমিটির নেতাদের কাছেও সেইসব আপত্তিকর ছবি পাঠিয়ে তাকে খারাপ মহিলা হিসেবে চিহ্নিত করে সেখান থেকেও বিতাড়িত করার চেষ্টা করছে তারা। আমার কথামতো চললে তুই এলাকায় থাকতে পারবি, নইলে তোকে পুলিশে ধরিয়ে দেবো- বলে তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগী এই নারী বলেন, এসব খারাপ ছবি পাঠিয়ে আমাকে ব্ল্যাকমেইলিং করে আমার জীবনটা তছনছ করে দিয়েছে আক্তার হোসেন। আমি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। যেকোনো মুহূর্তে আমার বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। এখন আমি পুলিশের ভয়ে এলাকায়ও থাকতে পারছি না। আমি প্রশাসনের কাছে ওর ব্ল্যাকমেইলিং থেকে মুক্তি চাই। এই অন্যায়ের সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি ওর সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে মুন্সি আক্তার হোসেন সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, রেবেকা সুলতানা (কনা) সাংবাদিক সম্মেলনে সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে যে সমস্ত অপপ্রচার করেছেন তা মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। তিনি এর তীব্র নিন্দা জানান এবং প্রকৃত সংবাদ তুলে ধরার জন্য সাংবাদিকদের নিকট আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম নুরুজ্জামান বলেন, মোবাইল চুরির অভিযোগে ঢাকার আদাবর থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। ওই অভিযোগ অনুযায়ী মোবাইলটি উদ্ধারের জন্য পুলিশ তার খোঁজে যায়। ওসি আরও বলেন, মোবাইলটির কাগজপত্র যার নামে তিনিইতো সেটির প্রকৃত মালিক। এছাড়া ব্ল্যাকমেইলিংয়ের বিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, আক্তারুজ্জামান কাস্টমস বিভাগের রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে দুই বছর আগে ঢাকায় অবসরে যান। তার বিরুদ্ধে চাকরি জীবনে অবৈধ উপায়ে বিপুল অর্থ-সম্পদ উপার্জনের অভিযোগ রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে তার মধুখালীতে ২ কোটি টাকা মূল্যের একটি চারতলা ভবন, ঢাকার মোহাম্মদপুর আদাবরে জয় নামে ১০ কোটি টাকা মূল্যের একটি পাঁচতলা বাড়ি, মিরপুর ২ নম্বরে চিড়িয়াখানা রোডে ১৫ কোটি টাকা মূল্যের বাড়ি, প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যমানের ৫০ একর জমি ছাড়াও দুইটি মাইক্রোবাসসহ আরও সম্পদ রয়েছে। এ ব্যাপারে ইতঃপূর্বে দুদকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগও