আপন বড়ভাইয়ের শ্বশুরকে নিজের পিতা সাজিয়ে ভুয়া জন্ম সনদ তৈরী করার অভিযোগ উঠেছে গনি মিয়া নামের এক পুরাতন রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে। ঐ জন্ম সনদ ব্যবহার করে ইতিমধ্যে সে পাসপোর্ট তৈরী করে মালেয়শিয়া থেকে ঘুরে এসেছে বলে জানা গেছে। রোহিঙ্গা গনি মিয়া তার ভুয়া জন্ম সনদ ও পাসপোর্ট ব্যবহার করে বর্তমানে ভোটার হতে মরিয়া হয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। সে খুরুশকুল ৬নং ওয়ার্ডের ঘোনার পাড়া এলাকায় বসবাস করে বলে জানা যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রোহিঙ্গা গনি মিয়া ও তার বড়ভাই মো: ইসমাঈল, মেজোভাই আনোয়ার প্রায় ২০ বছর আগে অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসে এবং খুরুশকুল এলাকায় জেলে হিসেবে কাজ শুরু করে। পরে সে ৬নং ওয়ার্ডের ঘোনা পাড়া এলাকার মোঃ কালু’র মেয়ে সাদেকা আক্তারকে বিয়ে করে। তার বড়ভাই ইসমাঈল জনৈক এনায়েত আলীর মেয়েকে এবং মেঝোভাই স্থানীয় ফকির পাড়া থেকে জনৈক ব্যক্তির মেয়েকে বিবাহ করে। এরপর রোহিঙ্গা গনি মিয়া বড়ভাই ইসমাঈলের শ্বশুর মৃত এনায়েত আলীকে পিতা সাজিয়ে ২০১৪ সালে একটি ভুয়া জন্ম সনদ তৈরী করে। পরবর্তীতে ঐ ভুয়া জন্ম সনদ ব্যবহার করে পাসপোর্ট তৈরী করে রোহিঙ্গা গনি মিয়া। একপর্যায়ে গনি মিয়া ঐ পাসপোর্ট দিয়ে মালয়েশিয়া পাড়ি জমায়। দীর্ঘ দিন মালেয়শিয়া থাকার পর গত মাসে আবারো বাংলাদেশে আসে রোহিঙ্গা গনি মিয়া। বাংলাদেশে আসার পর থেকে সে ভুয়া জন্ম সনদ ও পাসপোর্ট ব্যবহার করে ভোটার হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। সম্প্রতি রোহিঙ্গা গনি মিয়ার ভোটার হওয়ার আবেদন ফাইলটি নিয়ে তার স্ত্রী সাদেকা আক্তার খুরুশকুল ইউনিয়ন পরিষদে গেলে চৌকিদার, মেম্বার ও চেয়ারম্যান ফাইলটি দেখে রোহিঙ্গা অভিযোগে ফাইলটি আটকে দেন বলে জানা যায়। অনুসন্ধানকালে রোহিঙ্গা গনি মিয়ার মেঝোভাই আনোয়ারের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি জানান-১৯৯১ সালের পরে তারা তিন ভাই বাংলাদেশে চলে আসে এবং ফিশিং বোটে কাজ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা তিন ভাই বিয়ে করে পাহাড়ী খাস জমিতে বসতি গড়ে তুলে। তারা দুইভাই ভোটার হতে পারলেও গনি মিয়া এখনো ভোটার হতে পারেনি। তাদের পিতার নাম মোঃ হোসেন ও মাতার নাম আয়েশা খাতুন। তাদের পিতা মারা গেলেও মা বর্তমানে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প বসবাস করছে বলে জানায় গনি মিয়ার মেঝোভাই আনোয়ার।
রোহিঙ্গা গনি মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,”আমি ছোট থাকতে মায়ানমারে আমার মা-বাবা যায়। তারপর আমি বাংলাদেশে চলে আসি। বাংলাদেশে বিয়ে করেছি, ছেলে-মেয়ে হয়েছে। আমি বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্ট করে
মালয়েশিয়া গেছি, আবার আসছি। আমি যার সাথে বোট মারতাম তাকে পিতা বানিয়ে জন্ম সনদ তৈরী করেছি। বিষয়টি এদের পরিবারের অনেকে জানে।
রোহিঙ্গা গনি মিয়ার জন্ম সনদে উল্লেখিত পিতা মৃত এনায়েত আলীর বড় ছেলে জাফর আলম বলেন-গনি মিয়া একজন রোহিঙ্গা। সে ১৬-১৮ বছর বয়সে আমাদের এলাকায় আসে। সে সাগরে বোট মারতো। পরে সে কালুর মেয়েকে বিয়ে করে এবং তাদের ঘরে থাকতো। আজকে আপনার কাছে জানলাম সে আমার বাবার আইডি কার্ড ব্যবহার করে জন্ম সনদ করেছে। আমিও চাই তার ঐ ভুয়া জন্ম সনদ বাতিল করা হোক।
এবিষয়ে খুরুশকুল ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো: নাছির উদ্দীন বলেন- রোহিঙ্গা গনি মিয়ার জন্ম সনদটি ২০১৪ সালে করা হয়েছে। ঐ বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানি না। তবে সম্প্রতি তার ভোটার আবেদন ফাইলটি তার স্ত্রী আমার কাছে স্বাক্ষরের জন্য নিয়ে আসলে রোহিঙ্গার বিষয়টি চৌকিদারের মাধ্যমে জানার পর ফাইলটি বাতিল পূর্বক আটকে দিই। রোহিঙ্গাদের ভুয়া জন্ম সনদ তৈরী ও ভোটার হওয়া বন্ধে সকলের সহযোগীতা কামনা করেন ঐ জনপ্রতিনিধি।