কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় রয়েছে “পুরাতন রোহিঙ্গা ভোটার” ইস্যুতে। স্থানীয়দের দাবি, এ ইউনিয়নের ভোটার তালিকায় বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেছে বহু বছর আগে। ফলে এখানে প্রকৃত বাংলাদেশি ভোটারের তুলনায় ভুয়া ভোটারের প্রভাব অনেক বেশি। তারা বিভিন্ন এলাকায় জমি কিনে গড়ে তুলেছে বহুতল ভবন। কক্সবাজার জেলায় ইউনিয়ন ভিত্তিক রোহিঙ্গা ভোটারের তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি স্থানীয় সচেতন সমাজের।
অনুসন্ধানকালে পুরাতন রোহিঙ্গা ছৈয়দের সাথে দেখা হয় প্রতিবেদকের। তখন রোহিঙ্গা ছৈয়দ অপকটে স্বীকার করে বলেন-আমি ৯১ সালের আগে বাংলাদেশে এসেছি। আমি প্রথমে রংপুর চলে যায়, পরে খুরুশকুল চলে আসি। আমি মহেশখালী থেকে বিয়ে করি। আগে ঘোনার পাড়ার ভিতরে খাস জমি কিনে ঘর করি, পরে আমি ভোটার হয়ে রেজিষ্ট্রি জায়গা কিনি এবং বিল্ডিং করি। আমার ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে সবাই ভোটার হয়েছে। আমার এক ছেলে কাতার, এক ছেলে আমেরিকা থাকে। সবার পাসপোর্ট আছে।একপর্যায়ে তিনি বলেন-আমার মতো পুরাতন রোহিঙ্গা অনেক আছে, এদের তো কেউ কিছু বলছে না। এলাকার কিছু লোক আমার সাথে শত্রুতা করছে।
স্থানীয়রা জানান, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আগমন নতুন কোনো ঘটনা নয়। স্বাধীনতার পরে মিয়ানমারের আরাকান অঞ্চল থেকে আসা রোহিঙ্গা ছৈয়দের মতো ম্যাক্কা, আলীমুল্লাহ, মৌলভী জাহেদ, আব্দু মতলব, মো: ইমরান, মো: শাহ, মো: ইসলাম, মো: রফিক, লালাইয়া, মো: শুক্কর, নুরুল হক মাঝি, মোবারক, তারেক, আব্দু ছালাম, সাইফুল, আরাফাত, ইব্রাহিম, এনাম, রশিদ আহামদ, হোছন আহামদ, ইউনুছ, জাবেদ, রফিক, আব্দু ছালাম, আব্দু রশিদ, মকতুল হোসেন সহ শত শত রোহিঙ্গা খুরুশকুলের বিভিন্ন এলাকায় বসতি গড়ে তোলে। রাজনৈতিক আশ্রয়, সামাজিক সুবিধা ও প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগে অনেক রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে। খুরুশকুল ইউনিয়নে প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে “ভুয়া ভোটার” ইস্যুটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। স্থানীয়দের অভিযোগ, একজন প্রকৃত ভোটারের বিপরীতে একাধিক রোহিঙ্গা ভোটার রয়েছে। এতে ভোটের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং প্রকৃত জনগণের মতামত প্রতিফলিত হয় না। তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, “আমরা বাংলাদেশি হয়ে ভোট দিতে যাই, কিন্তু দেখি পাশের ঘরের রোহিঙ্গারাও একই তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলেছে। এতে আমাদের ভোটের মূল্য নষ্ট হয়ে গেছে।” খুরুশকুলের সাধারণ মানুষ এখন কার্যকর পদক্ষেপ চান। তারা মনে করেন, প্রকৃত ভোটার শনাক্ত করে ভুয়া ভোটারদের বাদ না দিলে এলাকায় কোনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন কমিশন কয়েক দফায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি চালিয়েছে। তবে পুরনো রোহিঙ্গা ভোটারদের অনেককে এখনও তালিকা থেকে বাদ দেওয়া সম্ভব হয়নি। একদিকে মানবিক ও রাজনৈতিক চাপ, অন্যদিকে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মদদ—সব মিলিয়ে ইসি কার্যকর উদ্যোগ নিতে হিমশিম খাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, “খুরুশকুলে পুরাতন ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। তবে একবার ভোটার তালিকায় ঢুকে গেলে আইনগতভাবে বাদ দেওয়া সহজ নয়।”